মণিরাপুর প্রতিনিধি: মণিরামপুরে ছিয়ানব্বই এলাকার মশিয়াহাটি বাজারে চলছে জমজমাট মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধের ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে স্বল্প মূল্যে মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ কিনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের কাছে বাজার মূল্যে বিক্রি করে অধিক লাভ করছে। ফলে মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ সরবরাহ করায় এলাকার হাজারো রোগী মৃত্যুঝুকির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অথচ প্রশাসন রয়েছে এ ব্যাপারে সম্পূর্ন নির্বিকার। মেয়াদউত্তীর্ন ওষুধ বিক্রির সময় হাতে নাতে শর্বরী ফার্মেসীর মালিক সুকুমার বিশ্বাসকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে ফার্মেসীতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানাযায়, মণিরামপুর উপজেলার ছিয়ানব্বই এলাকার কুলটিয়া ইউনিয়নের মশিয়াহাটি বাজারে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধের বেচাকেনার একটি সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে এ সিন্ডিকেটের প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন মেসার্স শর্বরী ফার্মেসীর মালিক সুকুমার বিশ্বাস। সুকুমার বিশ্বাসের আওতায় রয়েছে এলাকার বেশ কয়েকজন কোয়ার্ক ডাক্তার(পল্লী চিকিৎসক)। এসব কোয়ার্ক ডাক্তারদের মাধ্যমে তিনি খুলনা এবং যশোরের পাইকারী মোকাম থেকে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানীর মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ সংগ্রহ করেন স্বল্প মূল্যে। পরে ওই ঔষুধের লেবেল বেøড দিয়ে ঘষে(মেয়াদের তারিখ) উঠিয়ে বাজার মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ইতোপূর্বে মেয়াদউত্তীর্ন ওষুধ বিক্রিকালে কয়েকবার ধরা পড়েন শর্বরী ফার্মেসীর মালিক সুকুমার বিশ্বাস। লখাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস অভিযোগ করেন, তার কাছেও বিক্রি করা হয়েছে মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ। কেসি সার্জিক্যাল এন্ড শিশু(প্রা:) হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান,দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে সুকুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। মেডিকেল অফিসার জানান, গত শুক্রবার তিনি একজন রোগীকে প্রেসক্রিপশন করেছিলেন ন্যাপ্রো-এ ৫০০ ট্যাবলেট এবং রোলাক্স ৬০ ইনজেকশন। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে ওই রোগী শর্বরী ফার্মেসী থেকে কোম্পানীর নির্ধারিত মূল্যেই (এমআরপি) মেয়াদউত্তীর্ন ট্যাবলেট একং ইনজেকশন বিক্রি করা হয়। রাতে ইনজেকশন পুশ করার সময় মেয়াদউত্তীর্ন লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি জানাজানি হবার পর রোগীর স্বজনরা প্রতিবাদে ওই রাতেই মশিয়াহটি বাজারে শর্বরী ফার্মেসীতে গিয়ে হামলা চালিয়ে সুকুমারকে লাঞ্চিতের পর তালা ঝুলিয়ে দেয়। শনিবার এক পর্যায়ে সুকুমার মুচলেকা দিয়ে রেহায় পান। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে গতমাসে মেয়াদউত্তীর্ন গøুকোজ পাওডার বিক্রিকালে সুকুমার ধরা পড়েন। এসময় স্থানীয়রা ওই গøুকোজের প্যাকেট সুকুমারের গলায় ঝুলিয়ে বাজারে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ান। তারপরও সুকুমার মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধের কারবার করে আসছে। মেডিকেল অফিসার ডা: প্রশান্ত কুমার বিশ্বাষ জানান, মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ ব্যবহার করলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে শতকরা ৯৫ ভাগ। আর অধিক লাভের আশায় সুকুমার ও তার লোকজন মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ বিক্রি করে রোগীদের মৃত্যুর দিকে টেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি মনিরামপুর সাব-কমিটির অবৈতনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন মন্টু জানান, মেয়াদউত্তীর্ন ঔষুধ বিক্রি করা আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ। তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত। এ ব্যাপারে কথা হয় যশোরের ড্রাগ সুপার রেহান হাসানের সাথে। তিনি জানান, গত মাসে তিনি শর্বরী ফার্মেসীতে অভিযান চালিয়ে এক বস্তা অবৈধ স্যাম্পল উদ্ধার করে জরিমানাও করা হয়। তবে এবার না ছাড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড্রাগ সুপার জানান, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শর্বরী ফার্মেসীর মালিক সুকুমার বিশ্বাস এ ব্যাপারে কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি।
Leave a Reply