মণিরামপুর প্রতিনিধি: মণিরামপুরে খাদ্য অধিদপ্তরের ট্রাক ভর্তি সরকারী চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় তানায় দায়ের করা আলোচিত মামলা ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর হওয়ার পর খাদ্য গুদাম সংশ্লিষ্ট জড়িত চাল বিক্রি সিন্ডিকেট পরিচালনাকারীদের অন্যাতম শহিদুল ইসলামকে অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে ডিবির হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি গতকাল শনিবার নিশ্চিত করেন যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ আহম্মেদ। আটক শহিদুল ইসলাম মণিরামপুর পৌর এলাকার তাহেরপুর গ্রামের মৃত সোলাইমান মোড়লের পুত্র।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার সন্ধার দিকে তাকে তার নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবির ওসি মারুফ আহম্মেদ জানান, ডিবি পুলিশের অগ্রগতি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তার নিজস্ব গতিতে চলমান রয়েছে। সরকারী চাল কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় আরও যারা জড়িত আছে-সে যেই হোক না কেন তদন্তপূর্বক তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে গত ২২ এপ্রিল কালোবাজারে চাল বিক্রির মামলাটি মণিরামপুর থানা থেকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৪ এপ্রিল বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মণিরামপুর থানা পুলিশ পৌর এলাকার বিজয়রামপুর ভাই ভাই রাইচ মিলে অভিযান চালায়। এসময় ওই মিলে ট্রাক থেকে আনলোড করার সময় ৫’শ ৫৫ বস্তা ত্রাণের চালসহ মিল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ট্রাক চালক খুলনা দৌলতপুরের ফরিদ হাওলাদারকে আটক করে থানায় আনা হয়। বিষয়টি ব্যাপক জানাজানি হলে পুলিশ-প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সামনে আটক দুই জন চাল বিক্রির সাথে জড়িত খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষসহ চাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারীদের নাম পরিচয় প্রকাশ করে। অথচ, জড়িত রাঘোব বোয়ালদের নাম বাদ রেখে থানার এসআই তপন কুমার সিংহ বাদী হয়ে আটকদের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামী রেখে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান থানার ওসি (তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান। এক পর্যায় উক্ত ত্রাণের চাল বিক্রি নিয়ে সর্ব মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমসহ খোদ সরকার দলীয় কয়েকজন নেতার মুখে আলোচনায় স্থান পায় যে, ত্রাণের চাল নিয়ে দুর্নীতি করলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারীর কথা। ফলে দাবী ওঠে ত্রাণের চাল কালোবাজারে বিক্রির সাথে যারা জড়িত থাকুক না কেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এ ঘটনা টেলিভিশনসহ সর্বাধিক গণমাধ্যমে ফলাওভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এক পর্যায় উক্ত চাল নিয়ে সমালোচনা আর তোলপাড়ের সৃষ্ট পরিবেশ কিছুটা সামাল দিতে আটক মিল মালিক ও ট্রাক চালককে আদালতে হাজির করে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য পুনরায় তাদেরকে আদালতে তোলা হয়।
আটকদের মধ্যে মিল মালিক মামুন আদালতের বিচারকের নিকট তার জবানবন্দিতে বলেছে, খাদ্য গুদাম সংশ্লিষ্ট চাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী শহিদুল ইসলাম ও জগদিশসহ অন্যান্যরা তার কাছে ওই চাল বিক্রি করেছে। আটক ট্রাক চালক তার জবানবন্দিতে বলেছে, খুলনা থেকে আনা উক্ত চাল মণিরামপুর সরকারি গোডাউনে আনলোড করার কথা ছিল। কিন্তু গুদাম কর্তৃপক্ষ তার নিকট থেকে চালানের কাগজ-পত্র নিয়ে ভাই ভাই রাইচ মিলে ওই চাল আনলোড করতে বলে। এরপর আদালতের বিচারক তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এক পর্যায় অজ্ঞাত কারণে উক্ত ত্রাণের চাল কেলেঙ্কারীর মামলার তদন্ত কার্যক্রম থমকে দাঁড়ালে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর হয়।
Leave a Reply