মনিরামপুর প্রতিনিধি: মনিরামপুরে ঝাঁপা বাওড়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে দুই গ্রুফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এক সাংবাদিকসহ অন্তত: ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধারের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই রাতেই পুলিশ সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক দুলাল কুমার বিশ্বাসসহ তিনজনকে আটক করে। খবর পেয়ে রাতেই সহকারি পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসিসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বাওড়ে অনিদ্দিষ্টকালের জন্য সব পক্ষকে মাছধরাসহ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে মাইকিং করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২৫ জনের নামে একটি মামলা করা হয়। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাওড় এলাকায় দু গ্রæপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী, ঝাঁপা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আবু বক্কার সিদ্দিকী এবং মনিরামপুর থানার ওসি(তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, উপজেলার সর্ব বৃহৎ ঝাঁপা বাওড়টির আধিপত্য করা নিয়ে স্থানীয় ঝাপা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এবং সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছে। অবশ্য গতবছর সর্বোচ্চ দরতাদা হিসেবে বাওড়টিতে মাছ চাষের জন্য লিজ পান সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। চুক্তিমোতাবেক তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ চৈত্র। নতুন করে আবার লিজ দেওয়ার জন্য সরকার টেন্ডার আহবান করে। ইতিমধ্যে বাওড়টি লিজ নিতে সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এবং ঝাঁপা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি টেন্ডারে অংশ নিয়ে সিডিউল ড্রপ করে। তবে এখনও ওই টেন্ডারের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বর্তমান বাওড়টি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ঝাঁপা ইউনিয়ণ ভূমি অফিসের তদারকিতে রয়েছে।
ঝাঁপা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক কৃঞ্চ পদ বিশ্বাস জানান, তার ছেলে তাপস বিশ্বাস এবং তার বন্ধু কুমরেশ. মনিশান্ত, তুষার, শিমুল শনিবার সন্ধ্যার দিকে কোমলপুর মালোপাড়া ঘাটে বসে গল্প করছিলেন। তাপস বিশ্বাসের অভিযোগ রাত আটটার দিকে প্রতিপক্ষ যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সোনার বাংলা সমিতির সুব্রত বিশ্বাস এবং তার ছোটভাই বিপ্লবের নেতৃত্বে প্রায় ২৫/৩০ জন লোক লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে তাদের উপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এতে দৈনিক গ্রামের কাগজের স্থানীয় প্রতিনিধি অমরেশ বিশ্বাসসহ অন্তত: ২০ জন আহত হয়। তবে সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শ্যামল কুমার বিশ্বাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মালোপাড়া খেয়াঘাটে তার সমিতির সদস্য নারায়নের একটি নৌকা বাঁধা থাকে। শনিবার রাত আটটার দিকে প্রতিপক্ষ ঝাঁপা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কুমারেশ, রনি বিশ্বাস, মনিশান্তসহ কয়েকজন এসে ওই নৌকা নিয়ে বাওড়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় তাদেরকে বাঁধা দেয়ায় নারায়নকে তারা মারপিট করে। পরে খবর পেয়ে সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমিতির লোকজন ঘটনাস্থলে আসলে দুগ্রুফের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে রনি, শিমুল, সাধন, তাপস, দূর্গা, দিপু, কুমারেশ, মুকুন্দ, প্রতাপ, মদন, আশোক, উত্তম, বিবেক, মনিশান্ত, সাংবাদিক অমরেশসহ ২০ জন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের মধ্যে ১৪ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং প্রতিপক্ষ সমিতির নারায়নকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা করে। এ দিকে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাতেই পুলিশ সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক দুলাল কুমার বিশ্বাস, সুব্রত কুমার বিশ্বাস এবং সবুজ বিশ্বাসকে আটক করে। খবর পেয়ে ওই রাতেই সহকারি পুলিশ সুপার (মনিরামপুর সার্কেল) সোয়েব আহমেদ খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী, ওসি(সার্বিক) রফিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় শন্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে অনিদ্দিষ্টকালের জন্য বাওড়ে মাছ ধরাসহ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করে মাইকিং করা হয় বলে জানান স্থানীয় ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবু বকর ছিদ্দিক। এ দিকে ওসি(সার্বিক) রফিকুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় রনি বিশ্বাস বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২৫ জনের নামে রোববার সকালে থানায় একটি মামলা করেন। আটক তিনজনকে দুপুরে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply