হারুন-অর-রশীদ, মনিরামপুর: মনিরামপুরে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর আরো ৩৯ জন স্বাস্থ্য সহকারীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গত তিনদিনের ব্যবধানে স্বাস্থ্য বিভাগের মোট ৫০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হলো। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং একজন মেডিকেল অফিসারসহ ৬ জনের দেহ থেকে বুধবার নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে করোনা আতংকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বর্তমান প্রায় রোগীশুন্য হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, যশোর জেলার প্রথম কোরোনা রোগী(পজেটিভ) সনাক্ত হয় মনিরামপুরে গত ১২ এপ্রিল। করোনায় আক্রান্ত(পজেটিভ) ৩৫ বছর বয়সী ওই স্বাস্থ্যসহকারীকে উদ্ধারের পর কেশবপুরের ইমাননগর গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে স্বাস্থ্য বিভাগের সার্বিক তত্ত¡াবধানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্যসহকারী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মা ও শিশুদের টিকাদান করেন এমন ১৪ টি পরিবার সনাক্তের পর প্রশাসন তাদেরকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখেন। এ ছাড়াও লকডাউন করা হয় ওই স্বাস্থ্য সহকারীর ভাড়াবাসা, হাজরাকাটি গ্রামের পিতার বাড়ি এবং ইমাননগরের শ্বশুরবাড়ি ও তার আশপাশের কয়েকটি বাড়ি। আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্য সহকারীর সংষ্পর্শে থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ, মেডিকেল অফিসার ডা: অনুপ কুমারসহ স্বাস্থ্যবিভাগের ১০ জনকে ১২ এপ্রিল রাত থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। নতুন করে মঙ্গলবার থেকে আরো ৩৯ জন স্বাস্থ্য সহকারীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ, মেডিকেল অফিসার ডা: অনুপ, প্যাথোলোজিষ্ট আনিচুর রহমান, স্বাস্থ্য সহকারী সাধনা রানী এবং বাড়িওয়ালার ছেলে হাদিউজ্জামানের দেহ থেকে বুধবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে করোনা আক্রান্তের খবরে মনিরামপুরে জনমনে ব্যাপক আতংক বিরাজ করছে। যার প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন প্রায় রোগী শুন্য হয়ে পড়েছে। এ সময় কথা হয় দায়িত্বে থাকা স্টাফ নার্স বন্ধনা নন্দি এবং হাওয়া পারভীনের সাথে। তারা জানান, করোনা আতংকের কারনে ১২ এপ্রিল থেকে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেনা। তবে এ আতংকের বিয়ষটি স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত জানান, জীবনের ঝুকি নিয়ে তিনিসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য চিকিৎসকরা সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তিনি জানান, বুধবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগী আছেন মাত্র চার জন। এর মধ্যে একজন পুরুষ এবং তিনজন মহিলা। আর বহির্বিভাগে মাত্র ৮৪ জন রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ৮ এপ্রিল একজন স্বাস্থ্য সহকারীসহ মোট ১১ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১২ এপ্রিল এর মধ্যে ওই স্বাস্থ্য সহকারির রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে। নতুন করে বুধবার আরো ৬ জনের নমুন পাঠানো হলো।
Leave a Reply