ডেস্ক রিপোর্ট: কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে দুই শতাব্দী পুরনো পাগলা মসজিদ। পাঁচ তলা উঁচু মিনারের মসজিদটি দূর থেকেই নজর কাড়ে। তবে দেশজুড়ে এর পরিচিতি অন্য কারণে। এর দানবাক্স খুললেই মিলে কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালঙ্কার।
স্থানীয়রা বলছেন, এই মসজিদে মানুষ দু’হাত খুলে দান করেন। শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের লোকজনকেও এ মসজিদে দান করতে দেখা যায়। এটি দেশের অন্যতম বিত্তশালী মসজিদ।
মানুষের বিশ্বাস, কোনও আশা নিয়ে একনিষ্ঠ মনে এ মসজিদে দান করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। রোগ-শোক ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষজন এ মসজিদে মানত করে দান করেন। যুগ যুগ ধরে এ বিশ্বাস থেকেই মানুষ মসজিদটিতে দান করছেন।
তাই প্রতিমাসে কেবল দান থেকেই এ মসজিদের নগদ আয় হয় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণালঙ্কারও দান করেন অনেকে। প্রতি চার মাস পর পর মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। প্রতিবারই নগদ মেলে কোটি টাকার ওপরে।
২০১৭ সালে যে ক’বার মসজিদের দান বাক্স খোলা হয়েছে, প্রতিবারই মিলেছে কোটি টাকার ওপরে, সঙ্গে মিলেছে প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা। সবশেষ গত ৬ জানুয়ারি স্থানীয় প্রশাসন ও মসজিদ কমিটির নেতৃত্বে দানবাক্স খুলে এক কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া যায়। সঙ্গে পাওয়া যায় প্রচুর স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার; যা এখনও পরিমাপ করা হয়নি। এছাড়াও বেশ কিছু মার্কিন ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলার, সৌদি রিয়াল, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত ও মিয়ানমারের মুদ্রাও পাওয়া যায়। সেগুলো এখনও ভাঙানো (টাকায় বিনিময়) হয়নি।
পাগলা মসজিদ কমিটি সূত্রে ২০১৭ সালের যে দান বিবরণী পাওয়া যায় সে অনুযায়ী, ওই বছরের ১৫ এপ্রিল দানবাক্সে এক কোটি ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩২ টাকা, ২৬ আগস্ট এক কোটি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৭০ টাকা ও সবশেষ গত ৬ তারিখ দানবাক্স থেকে এক কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া গেছে। মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, সব টাকা ব্যাংকে জমা করা হয় এবং পরে ব্যয় করা হয় দুস্থদের সহায়তাসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজে।
সব মিলিয়ে তিন দফায় দানবাক্স খুলে তিন কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ৬৩৩ টাকা পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার।
২০১৬ সালে দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় দুই কোটি ৪৫ লাখ ৫২ হাজার ৬৪৪ টাকা। এছাড়া, জমা থাকা কয়েক কেজি স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার পরে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কিছু জিনিস নিলামে বিক্রি করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে ২৩৮ ভরি স্বর্ণ, যা বিক্রি করা হয়েছে ৪৯ লাখ টাকায়, ৮৬ ভরি রূপা বিক্রি করা হয় ৪৩ হাজার টাকায়। একটি হীরার আংটি বিক্রি হয়েছে ৩৮ হাজার ৬০০ টাকায়। তামা বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকায়। ৯৭২টি কুরআন শরীফ বিক্রি হয়েছে ২২ লাখ টাকায়, ৪৯ মণ মোম বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়, কিছু বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়।
তাছাড়া, প্রতি মাসে প্রায় ১৫০ মণ বাতাসা বিক্রি করা হয়; যা থেকে আসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।
তিন তলা মসজিদটির ভেতরে রয়েছে চারটি বড় সিন্দুক বা দানবাক্স। প্রতি শুক্রবার হাজারো মানুষ জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। তিন তলায়ও স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরের রাস্তায় নামাজ পড়তে দেখা যায় অনেককে। সপ্তাহের অন্যান্য দিনও মানুষজন দান খয়রাত করলেও শুক্রবার এর পরিমাণ হয় অনেক বেশি।
এত বিপুল অর্থ কিভাবে খরচ করা হয় জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষ পাগলা মসজিদে মানত করে প্রচুর দান করেন। প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর দান বাক্স খোলা হয়। মানুষের দানের অর্থ মসজিদটির উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়। মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। মসজিদটির একটি এতিমখানা রয়েছে, সেই এতিমখানার ছেলেমেয়েদের থাকা, খাওয়া, পোশাকসহ তাদের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ এখান থেকেই দেওয়া হয়।’
তিনি আরও জানান, এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার মসজিদের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজেও অনুদান দেওয়া হয়। তাছাড়া, মসজিদটির তহবিল থেকে বিভিন্ন দরিদ্র অসহায় লোকদের আর্থিক সহযোগিতা করা, চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি লেখাপড়া বা বিয়ের সময় আর্থিকভাবে দুর্বলকেও সহযোগিতা করা হয়।
গত শনিবার কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে মসজিদের সব সিন্দুক (দানবাক্স) খোলা হয়। পুরো টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকি করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের সাঈদ।
তিনি বলেন, ‘দানবাক্স খোলার সময় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আমি উপস্থিত ছিলাম। পুরো মসজিদটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকায় শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় পাগলা মসজিদের একটি হিসাব রয়েছে। সমস্ত টাকা এই ব্যাংকেই জমা কর
Leave a Reply