মোঃ শাহ্ জালাল (ঢাকা থেকে):-
শীত মানেই পিঠা পুলি পায়েসের আয়োজন। অগ্রহায়নে নতুন ধানের সোঁদাগন্ধ। এর সাথে তালমিলিয়ে আসে খেজুর আর আখের গুড়। নতুন ধানের চাল আর গুড় মিশিয়ে চলে পিঠা পায়েসের আনন্দ। প্রকৃতিক দূর্যোগ ধানের ফলন কম বা বেশী নিয়ে মন খারাপ বা ভাল যাই হোক না কেন শীত মওসুমটাকে সবাই উপভোগ করে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে বেশ ভালভাবে।
সকালের ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠে আর সন্ধেয় ভাজা ও রসালো পিঠের আয়োজন চলে ঘরে ঘরে। শীত আসবে নতুন ধান উঠবে সাথে গুড়। পিঠে উৎসব হবে না তাকি হয়। এসময় মেয়ে জামাইকে নাইওরে নিয়ে আসা হয়। মেয়ের বাড়ি থেকে শহুরে বেহায় বাড়িতে নতুন ধানের চালের আটা আর গুড় পাঠানো হয়। নইলে যে মেয়ের মান যাবে। এসব পেয়ে বউকে ধন্যি ধন্যি করে অভিনন্দন জানানো হবে। আবার ব্যতিক্রম না পেলে ক্ষেত্র বিশেষে শাশুড়ি ননদের খোটা শুনতে হবে। এমনটি চলে আসছে আবহমানকাল ধরেই আমাদের এই সোনার বাংলাতে।
ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ গেছে। অনেকে এখন শহর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে চলে যাচ্ছে পিঠা পায়েসের স্বাদ নেবার জন্য গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের কাছে।
এদিকে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসাদ নির্বাচন। এই জন্য অনেকে ভোট দিতেও চলেছেন গ্রামে বিশিষ করে যারা গ্রামের ভোটার কেননা ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসাদ নির্বাচন।সব মিলে এখন শহর-গ্রাম মিলেই চলছে আনন্দ ঘন এক পরিবেশ বাংলার বুকে। শুধু কি পিঠা পায়েস আর নির্বাচন। এখনতো শীতকালীন শাক স্বব্জীর ভর মওসুম। মাঠে মাঠে দুধ সাদা ফুলকপি ,এয়া বড় বড় বাধাকপি, সীম, মুলা, গাজর, টমেটোর সমারোহ। ক্ষেত থেকে তুলে আনা একেবারে টাটকা শাকস্বব্জীর স্বাদই যে অন্য রকম।এখন পানি কমছে। খাল বিলে মিলছে হরেক রকমের মাছ। এসব মাছের স্বাদও কম নয়। সব মিলিয়ে আমার যশোর অঞ্চলে বইছে ভিন্ন আমেজ। সনাতন পদ্ধতির সাথে যোগ হয়েছে যান্ত্রিকতা।
গেরস্ত বাড়ির খৈলান গুলো সকাল সন্ধ্যা ব্যাস্ত। ধান সেদ্ধ করার সোঁদাগন্ধ চারিদিকে।ঢেকিতে চাকিতে চলছে চাল ধান চাল পেশাই।বিকেল হলেই গাছিরা রসের হাড়ি নিয়ে ছুটছেন খেজুর গাছের দিকে। এক গাছ লাগিয়ে আবার অন্য গাছে। ভোর বেলায় মাটির কলস ভর্তি খেজুরের রস নিয়ে মজুদ করা। কাঁচা মিষ্টি খেজুর রস মুড়ির সাথে ভালই জমছে। ফেরী করে বিক্রি হচ্ছে প্রতি দিন সকাল সন্ধা। বেশীর ভাগ রসদিয়ে তৈরী হচ্ছে জিভে পানি আনা খেজুর গুড়। গাছিরা রস সংগ্রহ করার পর লম্বা চুলায় প্লেনসীট দিয়ে তৈরী লম্বা কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরীতে ব্যাস্ত মা,চাচিরা। শীতের তীব্রতা শহরের চেয়ে গ্রামে একটু বেশী হয়ে থাকে। তাই একটু উত্তাপ নিতে অনেকেই ভীড় করেন গুড় তৈরীর চুলার পাশে।
সকালে মোঃ শাহদাৎ হোসেন নামের একজন গাছিকে ফোন করে জানতে চাইলে মনিরামপুর কণ্ঠ কে তিনি বলেন, একটা খেজুর গাছের রসে কত পরিমান গুড় হয় প্রতিদিন।
তিনি বললেন একটা খেজুর গাছের রসদিয়ে গড়ে প্রতিদিন আধা কেজি গুড় তৈরী করা যায়। এতে বাড়ির বউ, ঝিরাই সাধারণত অংশ নেয় গুড় তৈরীতে। তাদের সকালের হাড় কন কনে শীতের ব্যাস্ততা নজর এড়ানো যায়না। খেজুর গুড়ের পাশপাশি তৈরী হচ্ছে আখের গুড়ও।গ্রামের মানুষের এর ব্যস্ততা হয়ে উঠে শহরের মানুষের আনন্দ।তবে সব মিলিয়ে এবারের শহরের ও গ্রামের মানুষের ব্যস্ততা একটু ভিন্ন আমেজে একাদশ সংসাদ নির্বাচন,পিঠা,গুড় চায়ের দোকান সব মিলমিশে একাকার।
Leave a Reply