কয়েক দশকের মধ্যে গ্রিসজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সাগরের কয়েক মিটার দূর থেকে ছয়মাস বয়সী একটি শিশুসহ ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারীরা।
উপকূলরক্ষীদের জাহাজ ও অন্যান্য নৌকা উদ্ধার অভিযানে নেমে সাগর থেকে চারটি লাশ তুলে এনেছে।রয়টার্সের এক ফটো সাংবাদিক একটি সংকীর্ণ রাস্তায় চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন।
এর আগে সমুদ্রসংশ্লিষ্ট গ্রাম মাতি-র একটি ভিলার উঠান থেকে আরো ২৬টি মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল রেডক্রস।
কাছের শহর রাফিনা-পিকার্মির মেয়র স্কাই টিভি কে বলেছেন,সব মিলিয়ে অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছে।
রাজধানী এথেন্স থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম সোমবার আগুনে ছেয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালেও অনেকগুলো স্থানে আগুন এখনো জ্বলছে।
বহু মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও দাবানলে ধ্বংস হয়েছে ১ হাজার ঘরবাড়ি। আহত হয়েছে ১৫০ জনের বেশি মানুষ।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহায়তাও চেয়েছে গ্রিস সরকার।
আগুন নিয়ন্ত্রণে হাজার হাজার দমকলকর্মীর লড়াইয়ের মধ্যেই রাজধানী এথেন্সের কাছাকাছি অনেক এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ জটিল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দমকলকর্মীরাও।
দাবানলের মধ্যে নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়া ১০ পর্যটককে খুঁজতে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায় বিবিসি।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি সমন্বয়ে সহায়তা করতে বসনিয়া সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপারাস।
“আগুন নিয়ন্ত্রণে মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব,তার সবই করব আমরা,” সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই সরকারের মুখপাত্র দিমিত্রিস জানাকাপৌলোস দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।কোস্টগার্ড সমুদ্র থেকে আরো চারজনের মৃতদেহ উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করে।পরে রেডক্রস ২৬ মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায়।
জানাকাপৌলোস শতাধিক আহতের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর বলেও জানান।আহতদের মধ্যে ১৬টি শিশুও আছে।হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবানলের কারণে ধ্বসে পড়া ভবন, কমলা ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া আকাশ এবং গাড়িতে করে পালিয়ে যাওয়া মানুষের নাটকীয় সব ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের আগুনের হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে সমুদ্রে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
“ভাগ্যভালো যে সমুদ্র ছিল, আমরা সেখানে যেতে পেরেছি, আগুন আমাদের পানি পর্যন্ত পুরোটা পথ তাড়িয়ে নিয়েছে। ঈশ্বরকে আমি বলেছিলাম, নিজেদের বাঁচাতে হলে দৌঁড়াতে হবে। পেছনের সবকিছু পুড়ে গেছে এবং আমরা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছি,” বলেন উপকূলীয় গ্রাম মাতির কোস্তাস ল্যাগোনাস।
আগুন নিয়ন্ত্রণে জরুরি বিভাগের সব কর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিপারাস। এথেন্সের আশপাশের অ্যাটিকা অঞ্চলজুড়ে জরুরি অবস্থাও জারি করেছেন তিনি।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে হেলিকপ্টার ও অতিরিক্ত দমকলকর্মী চেয়েছে গ্রিসের সরকার। অনুরোধে সাড়া দিয়ে ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড ও ফ্রান্স এরই মধ্যে অতিরিক্ত বিমান, যানবাহন ও দমকলকর্মী পাঠিয়েছে।
তাপমাত্রার পারদ চড়তে থাকায় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দমকলকর্মীদের দাবানল নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এথেন্সের কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। একইদিন হলিডে ক্যাম্পগুলো থেকে কয়েকশ শিশুকেও সরিয়ে নেওয়া হয়।
২০০৭ সালেও এ ধরনের ভয়াবহ দাবানলের সাক্ষী হয়েছিল গ্রিস; সেবারের আগুন দক্ষিণাঞ্চলীয় পেলোপোনেস উপদ্বীপের কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
Leave a Reply