নূরুল হক, মণিরামপুর।।
যশোরের মণিরামপুরের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কুখ্যাত আফসার রাজাকারের ভাইয়ের নামে স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য চাঁদের নিজ হাতে উদ্বোধনকৃত স্কুলের নাম ও স্থান পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল বুধবার মনিরামপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এ দাবি জানিয়েছেন তারা। এসময় উপস্থিত ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সদ্য বিলুপ্ত কমান্ডার মোঃ আব্দুল হাকিম।
লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে কুখ্যাত রাজাকার আফসার আলীর নেতৃত্বে উপজেলার নোয়ালি গ্রামের ডাঃ দ্বীন আলী, মাষ্টার আজিজুর রহমান, ডাঃ আনিছুর রহমানকে একই ইউনিয়নরে রামপুর মোড় নামক স্থানে নিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়াও আফসার ও তার সহোদর নিছার আলীর নেতৃত্বে উপজেলার রাজবাড়ি গ্রামের শান্তি কুমার বিশ্বাস, ঝাঁপা বাঁওড়ের ম্যানেজার আব্দুল গফুর, পারখাজুরা গ্রামের মোকাম মাষ্টার , মনোহরপুর গ্রামের কেরামত আলী, হাজরাকাটি গ্রামের মোন্তাজ মোড়ল, রামপুর গ্রামে আব্দুল মজিদ গাজী, রমজান গাজী, মশ্মিমনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী, নোয়ালি গ্রামের মোসলেম সরদারের বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে এবং একই গ্রামের ইজ্জত আলীর স্ত্রী, বজলে গাজীর স্ত্রী, ফজলে গাজীর স্ত্রীসহ নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলীর পুত্র হাসান আলী বলেন, আফসার আলী ও তার সহোদর নিছার আলীর নেতৃত্বে তাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তাদের বসতঘর, রান্নাঘর, ধানের গোলা, গোয়াল ঘরসহ সব কিছু জ্বালিয়ে দিয়েছিল তারা। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ীর মাটি খুঁড়লে এখনো সেই পোড়া মাটি গুলোর অংশ বিশেষ এখনো পাওয়া যায়। এমনি কি গোলাঘরের সেই পোড়া ধান – যা পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল। সেগুলোও এখনো আমার বাড়ীর মাটি খুঁড়লে মাঝে-মাঝে বের হয়ে আসে। ক্রন্দনরত অবস্থায় তিনি বারবার সেই একই কথা বলছিলেন, কি করে সেই রাজাকারদের নামে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক প্রদেয় স্কুলের নাম হতে পারে? তিনি আরও বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল বলে আমাকে মারার ঘোষনা দিয়েছিলেন ওই কুখ্যাত আফসার রাজাকার ও তার ভাই নিছার আলী। সেই ঘোষনায় ছিল যেখানে আমাকে পাবে সেখানে আমার শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে গুলি করে হাড়ের জয়েন্ট ছাড়ানো হবে। আমি সেই সময় ছোট ছিলাম কিন্তু ওই খুনিরা আমাকে ছাড় দেইনি। আমি বাগানে, গাছের ডালে, মাঠে-ঘাটে দিনের পর দিন না খেয়ে দিনাতিপাত করেছি। কেউ আমাকে এক মুঠো ভাত খেতে দিতে সাহস পাইনি। কারণ যে আমাকে খেতে দিবে তাকে শাস্তি দেবার ভয় দেখিয়েছিল ওই খুনিরা। কতদিন না খেয়ে থেকেছি সেকথা মনে আসলে আমার দুচোখ বেয়ে এখনো জল গড়িয়ে আসে। আর আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর দেখতে পাচ্ছি সেই রাজাকার বংশের নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা? এটা কি মগের মল্লুক নাকি? আমদের এমপি যা খুশি তাই করবে, আর আমরা মুখ বুঝে সব কিছু মেনে নিবো? এ সময়ে ওই ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নারায়ন চন্দ্র সরকার দাবি করে বলেন, অনতি বিলম্বে স্কুলের নাম ও স্থান পরিবর্তন করে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতা স্মৃতি বিজড়িত নতুন কোন নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন যে, স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্যকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ থেকে যেন প্রত্যাহার করে নেয়ার বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে নিছার আলীর নামে “রান ডেভেল্পমেন্ট নিছার আলী মেমোরিয়াল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়” উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য। এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযোদ্ধারা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনরা এ সংবাদ সম্মেলন করেন। বিদ্যালয়ের নাম ও স্থান পরিবর্তনের দাবিতে আগামীতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারন জনগণকে সাথে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচীরও ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নারায়ন চন্দ্র সরকার, মুক্তিযুদ্ধচলাকালিন কমান্ডার মতিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান, মোঃ জিন্নাত আলী, ইনছার আলী, মশিয়ার রহমান, আব্দুল বারি, হাবিবুর রহমান, আবু দাউদ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানসহ ওই এলাকার স্বাধীনতা স্বপক্ষ ও সাধারণ জনতা।
Leave a Reply