একাধিকবার আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের হুশিয়ার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মুখ দেখে আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নির্বাচনী জরিপে যাদের অবস্থান ভালো, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, জিতে আসতে পারবে তারাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তিনি এটাও বলেছেন, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি অনেকের দায়িত্ব নিয়েছি। এবার কারো দায়িত্ব নিতে পারব না। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হবে বলেই ভাবছেন আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা। সম্প্রতি ১১ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের জনপ্রিয়তার কারণে। নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা না থাকায় অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীও বাদ পড়তে পারেন বলেও আলোচনা আছে দলটির ভেতরে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আমাদের সময়কে এ বিষয়ে বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না বলে এমপি মনোনয়নে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু এবারের নির্বাচনটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার দলের পক্ষে তা-ই করা হবে। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনী জরিপ দলের পক্ষে প্রতি ৬ মাস পর পরই করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জরিপগুলো আরও ঘন ঘন করা হয়। এবারও জরিপ চলছে। জরিপের ফল মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগে নির্বাচিত এমপি রয়েছেন ২৩৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২১৬ এবং নারী ১৮ জন। বিভিন্ন সংস্থা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে পরিচালিত একাধিক জরিপের ফলের ভিত্তিতে দেখা গেছে, এই ২৩৪ এমপির মধ্যে প্রায় ৩৪ জন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বাকি ২০০ জনের প্রায় কমবেশি সবাই বিতর্কিত। তাদের মধ্যে কেউ জনবিচ্ছিন্ন, কেউ আত্মীয়করণে জড়িত, কেউ দুর্নীতিবাজ, কেউ টিআর-কাবিখার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, কেউ চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ লুটে নিয়েছেন। কেউ আবার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকব্যবসা এবং দখলবাণিজ্যে জড়িত। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির এক নেতার মতে, বাংলাদেশের বুর্জোয়া রাজনীতিতে এভাবে বাছাই করলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার অবস্থা দাঁড়াবে! যাদের অবস্থান মোটামুটি ভালো এবং সবচেয়ে বড় কথা নির্বাচনে জিতে আসার মতো অবস্থান রয়েছে; তারাই পাবেন দলীয় মনোনয়ন।
মাঠে সরব মনোনয়নপ্রত্যাশীরা : সারা দেশের হাতেগোনা কয়েকটি আসন বাদে প্রায় সব নির্বাচনী এলাকাতেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমে পড়েছেন। এদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা, ব্যবসায়ী, আমলাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ থাকলেও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের আধিক্য চোখে পড়ার মতো। ঢাকা মহানগরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা-৭ আসনের মনোনয়ন চাইবেন। একই আসনে জনসংযোগ শুরু করেছেন লালবাগের কমিশনার হাসিবুর রহমান মানিক। ঢাকা-৮ আসনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। ঢাকা-১৪ আসনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সাবিনা আক্তার তুহিন। সংরক্ষিত আসনের এই এমপি এবার নির্বাচনের পক্ষে। ঢাকা-১৬ আসনে নির্বাচনে প্রস্তুত যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ঢাকা-১৩ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা-১৫তে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা-৯ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিন পলাশসহ রাজধানীর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই একাধিক প্রার্থী জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।
এছাড়া সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বরিশাল-২ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বরিশাল-৩ আসনে, নেত্রকোনা ৩-এ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, নেত্রকোনা ৪-এ সাবেক ছাত্রতো শফি আহমেদ, নেত্রকোনা ৫-এ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫তে আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শরিয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর ৩-এ বাহাদুর বেপারি, পিরোজপর ২-এ ইসহাক আলী খান পান্না, জামালপুর ৫-এ আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, জামালপুর-২ আসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহজবিন খালেদ, মাগুরা ১-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর, চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর-৫ আসনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সাবেক প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা, ফরিদপুর-১ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা শাহজাদা মহিউদ্দীন, ফেনী ৩-এ সাবেক ছাত্রনেতা জহিরউদ্দিন মাহমুদ লিপটন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন গাইবান্ধা ৫-এ, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন চট্টগ্রাম-৬ আসনে, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বাগেরহাট-৪, সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সরোয়ার কবির মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে, সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মনির ঝালকাটি-১ আসনে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন আহমেদ মহি প্রমুখ।
সূত্রঃ আমাদের সময়।
Leave a Reply